আমার ছোটবেলার এক বন্ধু dandy লুক ক্যারেক্টারের ছেলে । কাউকে দেখলে ইয়ো ইয়ো করে উঠে । ইয়ো ইয়ো হোয়াটস আপ , বেবস্ । কেউ ডাকলে ইয়ো ইয়ো, কি হয়ছে তাড়াতাড়ি বলো । তো এই ছেলেটা একটা মেয়ের প্রেমে পরে যায় । মেয়েটি অনেক সুন্দর । কিন্তু গরীব । তাঁকে জন্ম দিতে গিয়ে মা শহীদ হয়ে যায় । বাবাই তাঁর সব । কিন্তু বাবা এখন ভীষণ অসুস্থ । ঔষূধ কেনার টাকা নেই তাঁর । ভেঙে পড়ে মেয়েটি । বাংলা সিনেমার হিরোদের মতন ছেলেটার আগমন ঘটে মেয়েটার জীবনে । দেখেই তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে । ছেলেটা থাকে ভাঙ্গাচোরা মেসে । কিন্তু মেয়ের সামনে প্রোফাইল দাঁড়ায় করায় ফাইভ স্টার হোটেলের মালিকের একমাত্র আদরের ছেলে সে । প্ল্যানে করে গুলিস্তান টূ মতিঝিল যায় সে । প্রগতিশীল নারীদের চিন্তাভাবনা নিয়ে গলাধঃকরণ করা কিছু আর্টিকেল উদ্গিরন করে মেয়ের সামনে ।
এক কথায় বলা যায় , মেয়েকে পটানোর জন্য কোন অস্ত্রই বাকি রাখে না সে । মেয়েও টাকার সুঘ্রাণ , ছেলের ড্যাশিং লুক দেখে রাজি হয়ে যায় । মেয়েকে আগে সবাই চিনতো ফেইসবুক প্রোফাইল অনুসারে , অ্যানজেলিনা নামে , কিন্তু বিয়ে হয় জরিনা নামে । ছেলেটারও একই দশা । সবাই তাঁকে চিনতো জ্যাকি চ্যাং নামে , পরে নাম হয় চান মিয়া । যায় হোক , বিয়ের আগে এখনকার সব ছেলেরা টগবগে তরুন থাকে , বিয়ের পরেই সবাই ক্যামেনে জানি বুড়া হয়ে যায় । এখন সংসার জীবন , সব ঘরের মতন এই ঘরেরই একই কাহিনী । চান মিয়াঁর গ্রহণ রুপ ভেসে আসে । হেব্বি রোমান্টিক মন তাঁর । অনেক আদর যত্নে মারধর করে আগলে রাখে তাঁর সোহাগি বউকে ।আর মেয়ের বাবার তো যায় যায় অবস্থা । ঔষূধ কেনার জন্য এক টাকাও দিতে রাজি না আদরের জামায়টা । কিন্তু শ্বশুর মারা গেলে যদি প্রেতাত্মা তাঁর উপর ভর করে তাই কালেভদ্রে কুঁড়ি পঁচিশ টাকা পাঠিয়ে দেয় । টাকা পাঠানোর আগে পুরো বস্তি মহল্লা জেনে যায় চান মিয়া শ্বশুরকে টাকা পাঠাচ্ছে । মহল্লাবাসিও তৎক্ষণাৎ মন্তব্য প্রকাশ করে অনেক উদার মহান চরিত্রের অধিকারি সে । সবাই তাঁকে অনেক ভালবাসে । সকাল বেলা ভ্যানগাড়ি চালায় । রাতের বেলা বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা মারে । আর অন্যদিকে মেয়েটার যায় যায় অবস্থা ।
দীপিকার মতন মুখখানা এখন তেলাপোকার মতন হয়ে গেছে । সকাল থেকে রান্না করে ঘর পরিষ্কার করে , তারপর যায় বুয়াগিরি করতে । রাতে হলেই খেতো স্বামীর সেই সোহাগভরা ভালবাসা । কিন্তু নিজের সংসার বলে চুপ থাকে সে । অন্যদিকে বন্ধুমহলে জামায় কিন্তু সেইরাম ফেরেস্তা মানুষ । কারোর সাথে ঝগড়া তো দুরের কথা । কোনদিন উঁচুস্বরের কারোর সাথে কথা বলে নাই । সবাইকে অনেক মান্যগন্য করে । সবার কাছে বলে বেরায় , " বউরে আমি অনেক ভালবাসি । তাঁর কথায় উঠবস করি । ঘরে যেতেই পকেট ছিরে তাঁরে টাকা দিয়ে আসি । তাঁরে আমি ইসমার্ট ফোন কিনে দিয়েছি , আমি নোকিয়া ১১০০ ব্যবহার করি । " মোবাইলটা বন্ধুদের চোখের সামনে তুলে ধরে বলে ," এই দেখছছ না তোরা । ইয়া অ্যাঁর মুবাইল । চিনছছ নি , তোরা ? শ্বশুরকে স্কয়ারের দেখাতে লয় যাই প্রতি মাসে । রান্না বান্না সকাল বেলা করি আসি । বউ এর যাতে কষ্ট না হয় । " এইভাবে চান মিয়া নিজের গল্প বলতে থাকে । কিন্তু বন্ধুমহলে আড্ডার সময় বউ বরাবরের মতন অনুপস্থিত থাকে । যদি বন্ধুর মহলে বউরে নিয়ে তাঁর রস উঠাতে ব্যাঘাত হয় তাই বউকে আড়াল করে রাখে চান মিয়া । কিন্তু ঘরে জরিনার প্রতি ভালবাসার শেষে হয় না । তাঁর ভালোবাসার আবেগে জরিনার পরান যায় যায় অবস্থা । এক সময় ঘর থেকে চলে যেতে চাইলে বলে " তুমি যাইবা ক্যান ? গান শুরু করে চান মিয়া --
কইলজার ভিতর গাঁথি রাইক্কুম তোঁয়ারে
সিনার লগে বাঁধি রাইক্কুম তোঁয়ারে, ও ন'নাইরে
কইলজার ভিতর গাঁথি রাইক্কুম তোঁয়ারে
।। -----"
শতই হোক নিজের সংসার । শত অত্যাচার মুখ বন্ধ করে দিন কাটায় জরিনা। এক সময় রাস্তায় এক চুন্দরি মহিলাকে দেখে কাইত হয়ে যায় চান মিয়া । বুড়ো শরীরে যৌবন মাখানো সতেজ মন আবার কুতকুতি দিয়ে উঠে । সিনেমার ভিলেনের মতন বিয়ে করে ঘরে তুলে নিয়ে আসে জামায়বাবু । এক প্লেট ভাত বেশী দেয়া লাগবো দেখে ভালবাসামাখা লাথি মেরে বের করে দেয় তাঁর প্রথম বউকে । বউ কেঁদে কিছু বলতে যাচ্ছিলো , তৎক্ষণাৎ চেঁচিয়ে উঠে চান মিয়া , " আমি এইখানে একমাত্র কর্তা , এইটা আমার ঘর ।। তুই কে বলার ? আমার যা খুশি আমি তা করুম । আমি একটা না আরও একশো টা ইয়ে করুম , তাতে তোর কি ? " যাক্ , বউ চলে গেছে । অপারেশন সাকসেসপুল । এখন বন্ধুদের ম্যানেজ করতে হবে । এবার প্রথম বউ অনুপস্থিত । বন্ধুদের দেখেই সাকিব খানের মতন হাউমাউ করে কেঁদে উঠে চান মিয়া - "তোরা তো দেখছছ , অ্যাঁই বউরে কত ভালবাইসতাম । বউ অ্যাঁর লগে কি বেইমানিটা না করলো । অ্যাঁরে ধুই চলি গেছে গই । প্রতিমাশে বিশ হাজার টাকার আটা ময়দা সুজি শুধু মুখে মাইখবার লায় কিনি দিতাম । কতো খারাপ , নষ্ট মনের মহিলা ছিলো হিতি । অ্যাঁই একা এখন ক্যানতে থাককুম । অ্যাঁর ডর করে । কস, না তোরা , কি করমু ? " -
চান মিয়াঁর দুঃখ থেকে বন্ধুমহলরা আবেগে কাঁদতে থাকে । তাদের মধ্যে একজন তাঁকে সান্ত্বনা দেবার জন্য চেষ্টা শুরু করে - " বন্ধু বউ চলে গেছে কষ্ট পাইছো। বুচ্ছি তো আমরা । সব মেয়েরাই এইরাম হয় । এবার , দুই ট্যাঁকার একখান বিড়ি ধরাও তো দেখি । বিড়িতে একটা টান দিলেই দেখবা মন ফুরফুরা কইরা উঠতাছে । তারপর ঘরে যাইয়া গ্যাংনাম ড্যান্স দিবা । সকাল হইলে দেখবা , মন থেইকা "উলালা উলালা" গান বাইর হইতাছে । "