সমাজ জীবনে মাকড়শার জাল - Shomaj Jibone Makorshar Jal

একেকটা ঘটনা জীবন থেকে অনেক কিছু নিয়ে যায় , তাঁর বিনিময়ে অনেক শিক্ষাও দান করে যায় । অনেকে এই শিক্ষা থেকে নিজেকে পাল্টাবার চেষ্টা করে , কিন্তু আবার জীবনের মারপ্যাঁচে পরে সবাই পারে না নিজেকে পাল্টাতে । শুধু নীরবে চিৎকার করতে থাকে , কেউ শুনতে পায় না সেটা । ভুলেও চিৎকার করলে ভদ্রমুখোশধারি সমাজে তা নিতান্ত কটু চোখে দেখে মানুষ । কতো ধরণের মারপ্যাঁচ ; এই ব্যবসায়িক জগতে । দেখেবেন , বুঝবেন ; কিছু বলতে পারবেন না । শুধু আপনার মুখে থাকবে  হাসি ; সৌজন্যতার প্রদর্শনের জন্য করা হয় সেটা । আমরা তো সবাই সামাজিক ; সমাজের নিয়ম কানুন ; শ্রদ্ধাবোধ কাজ করে আমাদের মধ্যে । কোন মেয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চললে সবাই তন-মন সেবার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দেয় , কিন্তু সেই মেয়েটা সবার সামনে যখন নির্যাতিত হয় তখন সবাই হাত গুটে বসে থাকে  , পারলে ভিডিও করে সামাজিক চেতনা বৃদ্ধির কঠোর প্রয়াস চালানো হয়।

হয়তো অনেক সময় সাক্ষীও নির্বাক থাকে । তাঁর জীবন আছে , টাকা দরকার আছে । কিন্তু ঘটনা সম্পাদনের সময় কিন্ত এককভাবে ঘটানো হয় না , অনেক পার্টনারও থাকে , বাংলায় বলা যেতে পারে তাকে সহযোগ । তাদের কাজ হলো সাপোর্ট দেয়া , তালে তাল দেয়া । কারণ সেই পাপাচারি বা বেঈমানি কাজে লিপ্ত মানুষের সাথে তাদেরও মঙ্গল জড়িত থাকে । তাদের ভাত-তরকারির জোগান হয় তাঁরই দয়া কামনার কারণে । এই একটা দুনিয়া , এক শ্রেণীর মানুষের সম্পদ রাখার জায়গা নেই ; আবার এক শ্রেণীর মানুষের ভাত-কাপড় জোগাড় করতেই নিজেদের জীবন চলে যায় । দুনিয়াও কিছু কিছু মানুষের উপর পক্ষপাতদুষ্ট ; এই কথা যদি বলি তাহলে মনে হয় ভুল হবে না । ষড়যন্ত্রকারি ষড়যন্ত্র করে অনেক ভাবে , কিন্তু বন্ধু মহলের কাছে নিজেকে প্রমান করে তিনি অনেক বিচক্ষন । সবার কাছে বুঝানো হয় ;  ব্যবসার সুরক্ষার জন্য করা হয় সেগুলো  ।

কিন্তু আপনি  তাঁর সাথে চলেন , তাঁকে দিয়ে কাজ করান ; কিন্তু যখন সে আপনার উপর কিছু অধিকার প্রয়োগ করে তখনই সে খারাপ হয়ে যায় !!! তাঁর উপর শুরু হয় মানসিক নিপীড়ন । তাঁর হয়তো ক্ষমতা নেই ; তাঁকে টেনে ব্যবসার অন্যতম প্রতিযোগী দাড়া করিয়ে দেয়া হয় । এই দুনিয়ায় যত বড় ক্ষমতাবান থাকুক না কেন ;নিজেকে যতই উদারভাব প্রদর্শন করুক না কেন ,  প্রতিযোগীকে দেখলে মুখ চুপসে যায় ; তখন দৃষ্টিকোন তাঁর নেকড়ে বাঘের মতন  হয়ে যায় । আপনি যদি তাঁর অধীনে কাজ  করেন , তাহলে সে কোনভাবেও চাইবে না আপনি তাঁর উপরে যান , তাঁর চেয়ে দক্ষ হোন । হয়তো এই জন্যই এক রাজ্যে এক রাজা থাকে । একটা মজার বিষয় , ভিক্ষুক দান পায় কোন স্বচ্ছল মানুষ থেকে ; কোন স্বচ্ছল মানুষ দান পায় আবার ধনী লোক থেকে , দান মানে আজকাল আবার চাকরির সুযোগও বুঝায় । কিন্তু ভিক্ষুক কিন্তু অন্য ভিক্ষুকে দান করে না । এক ব্যবসায়ী একই ক্যাটাগরির অন্য কাউকে কোনদিন ভাল চোখে দেখে না । যদি সুযোগ ; বা টিপস পায় তো সেটা অন্য কথা।


প্রেম গুরু হয়ে উঠার গল্প - Prem Guru Hoye Uthar Golpo

আমার এক বন্ধু প্রতিদিন মেয়ে দেখতে বের হতো , বিয়ে করতে নয় , প্রেম করতে । কোন মেয়েই তাঁর পছন্দ হয় না । একদিন ক্যান্টিনের এক মেয়েকে দেখে -কান্নাকাটি করছে । সে কাছে গেলো ব্যাপারটা দেখার জন্য । মেয়েটিও সময় নিয়ে আস্তে আস্তে সমস্ত দুঃখ দুর্দশার কথা খুলে বলতে থাকে । ছেলেটিও কৌতূহলী মন নিয়ে সমস্ত কথা মন নিয়ে গিলতে থাকে । কথা শেষে , ছেলেটির মন আইস্ক্রিমের মতন গলে গেলো । মায়াবী মুখখানা তাঁর অনেক আপন মনে হলো । তাঁর সমস্ত ঝামেলা , ভেজাল বীরদর্পে মোকাবেলা করার পণ নিলো । যে কথা সেই কাজ । মেয়েটির জাগতিক যাবতীয় সকল সমস্যার বিরূদ্ধে মোকাবেলা করে গেল সে । দিন যায় রাত আসে , রাত যায় দিন আসে । তাঁর মনে একটিই চিন্তা , মেয়েটার সমস্যা ।

মেয়েটির তাঁর কষ্টের প্রশংসা করতে থাকে , আর মাঝে মাঝে ভালবাসা মাখা কিটক্যাট খাওয়ায় । হৃদপন্দন বাড়ানোর জন্য ছেলেটিকে মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখায় , " তুমি আমার অনেক কাছের , অতি আপনজন । আমার ভবিষ্যৎ দেখি তোমার চোখে । " আস্তে আস্তে মেয়েটার ঝামেলা কমতে থাকে , সুখের দিন আসতে থাকে । সুখ আসতেই ছেলেটাকে দূরে দূরে সরে রাখে মেয়েটি ।ভেজালে যত কাছে ছিল , সুখের সময় রাখে ততটা দূরে । কারণ বুঝতে পারে না ছেলেটা ।কষ্ট পায় ছেলেটি । স্বান্তনা খুঁজতে থাকে ।
অবশেষে দর্শনবিদ্যার আশ্রয় নেয় ছেলেটি । "সুখের সময় থাকতে পারি নাই তো কি হয়েছে , দুঃখের সময় তো পাশে ছিলাম" । এক বড় মনের আত্মপ্রকাশ ঘটে । রাস্তার গরিব , অসহায় মানুষরজন ও সেই গোপন গুন খানার প্রকাশ করিয়া দিতে পারে নাই । আবার নিজে নিজে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করে সে । "হয়তো , আমি সুবিধার লোক না , তাই সেইফ ফিল করে নাই । :P " কিন্তু আরেকটি প্রশ্ন তাঁর মনের মধ্যে উঁকি মারতে থাকে , " সুখের সময় আমাকে সেইফ মনে না করলেও , ভেজালের সময় কেন সেইফ ফিল করলো ?" কৌতূহলী মন আবার তাঁর কাছে টেনে নিয়ে গেলো । মেয়েটা তাঁর কথা শুনে বলে , " আমি কি করছি জানু , তোমার কাজের প্রশংসা করছি , তোমাকে কিটক্যাট খাওয়াইছি ।আর কি করুম , জানু ? " এই কথা শুনে প্রেমিকের হৃদয়খানা পটাশ হয়ে গেলো । ছেলেটার হৃদয় ভেঙে গেলো ।
ছেলেটাকে এখন মাঝে মাঝে রমনাপার্কে দেখা যায় । একটা টুল , টেবিল নিয়ে প্রেম ঘটিত সমস্ত সমস্যা দূরীকরনের সার্ভিস দেয় । পাশে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকে , " কান্না হইতে সাবধান ! --প্রেমগুরু " ।

----

উলালা উলালা এক নারীর অন্ধকার গল্প - Uala Ulala Ek Narir Ondhorer Golpo

আমার ছোটবেলার এক বন্ধু dandy লুক ক্যারেক্টারের ছেলে । কাউকে দেখলে ইয়ো ইয়ো করে উঠে । ইয়ো ইয়ো হোয়াটস আপ , বেবস্‌ । কেউ ডাকলে ইয়ো ইয়ো, কি হয়ছে তাড়াতাড়ি বলো । তো এই ছেলেটা একটা মেয়ের প্রেমে পরে যায় । মেয়েটি অনেক সুন্দর । কিন্তু গরীব । তাঁকে জন্ম দিতে গিয়ে মা শহীদ হয়ে যায় । বাবাই তাঁর সব । কিন্তু বাবা এখন ভীষণ অসুস্থ । ঔষূধ কেনার টাকা নেই তাঁর । ভেঙে পড়ে মেয়েটি । বাংলা সিনেমার হিরোদের মতন ছেলেটার আগমন ঘটে মেয়েটার জীবনে । দেখেই তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে । ছেলেটা থাকে ভাঙ্গাচোরা মেসে । কিন্তু মেয়ের সামনে প্রোফাইল দাঁড়ায় করায় ফাইভ স্টার হোটেলের মালিকের একমাত্র আদরের ছেলে সে । প্ল্যানে করে গুলিস্তান টূ মতিঝিল যায় সে । প্রগতিশীল নারীদের চিন্তাভাবনা নিয়ে গলাধঃকরণ করা কিছু আর্টিকেল উদ্গিরন করে মেয়ের সামনে ।

এক কথায় বলা যায় , মেয়েকে পটানোর জন্য কোন অস্ত্রই বাকি রাখে না সে । মেয়েও টাকার সুঘ্রাণ , ছেলের ড্যাশিং লুক দেখে রাজি হয়ে যায় । মেয়েকে আগে সবাই চিনতো ফেইসবুক প্রোফাইল অনুসারে , অ্যানজেলিনা নামে , কিন্তু বিয়ে হয় জরিনা নামে । ছেলেটারও একই দশা । সবাই তাঁকে চিনতো জ্যাকি চ্যাং নামে , পরে নাম হয় চান মিয়া । যায় হোক , বিয়ের আগে এখনকার সব ছেলেরা টগবগে তরুন থাকে , বিয়ের পরেই সবাই ক্যামেনে জানি বুড়া হয়ে যায় । এখন সংসার জীবন , সব ঘরের মতন এই ঘরেরই একই কাহিনী । চান মিয়াঁর গ্রহণ রুপ ভেসে আসে । হেব্বি রোমান্টিক মন তাঁর । অনেক আদর যত্নে মারধর করে আগলে রাখে তাঁর সোহাগি বউকে ।আর মেয়ের বাবার তো যায় যায় অবস্থা । ঔষূধ কেনার জন্য এক টাকাও দিতে রাজি না আদরের জামায়টা । কিন্তু শ্বশুর মারা গেলে যদি প্রেতাত্মা তাঁর উপর ভর করে তাই কালেভদ্রে কুঁড়ি পঁচিশ টাকা পাঠিয়ে দেয় । টাকা পাঠানোর আগে পুরো বস্তি মহল্লা জেনে যায় চান মিয়া শ্বশুরকে টাকা পাঠাচ্ছে । মহল্লাবাসিও তৎক্ষণাৎ মন্তব্য প্রকাশ করে অনেক উদার মহান চরিত্রের অধিকারি সে । সবাই তাঁকে অনেক ভালবাসে । সকাল বেলা ভ্যানগাড়ি চালায় । রাতের বেলা বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা মারে । আর অন্যদিকে মেয়েটার যায় যায় অবস্থা ।

দীপিকার মতন মুখখানা এখন তেলাপোকার মতন হয়ে গেছে । সকাল থেকে রান্না করে ঘর পরিষ্কার করে , তারপর যায় বুয়াগিরি করতে । রাতে হলেই খেতো স্বামীর সেই সোহাগভরা ভালবাসা । কিন্তু নিজের সংসার বলে চুপ থাকে সে । অন্যদিকে বন্ধুমহলে জামায় কিন্তু সেইরাম ফেরেস্তা মানুষ । কারোর সাথে ঝগড়া তো দুরের কথা । কোনদিন উঁচুস্বরের কারোর সাথে কথা বলে নাই । সবাইকে অনেক মান্যগন্য করে । সবার কাছে বলে বেরায় , " বউরে আমি অনেক ভালবাসি । তাঁর কথায় উঠবস করি । ঘরে যেতেই পকেট ছিরে তাঁরে টাকা দিয়ে আসি । তাঁরে আমি ইসমার্ট ফোন কিনে দিয়েছি , আমি নোকিয়া ১১০০ ব্যবহার করি । " মোবাইলটা বন্ধুদের চোখের সামনে তুলে ধরে বলে ," এই দেখছছ না তোরা । ইয়া অ্যাঁর মুবাইল । চিনছছ নি , তোরা ? শ্বশুরকে স্কয়ারের দেখাতে লয় যাই প্রতি মাসে । রান্না বান্না সকাল বেলা করি আসি । বউ এর যাতে কষ্ট না হয় । " এইভাবে চান মিয়া নিজের গল্প বলতে থাকে । কিন্তু বন্ধুমহলে আড্ডার সময় বউ বরাবরের মতন অনুপস্থিত থাকে । যদি বন্ধুর মহলে বউরে নিয়ে তাঁর রস উঠাতে ব্যাঘাত হয় তাই বউকে আড়াল করে রাখে চান মিয়া । কিন্তু ঘরে জরিনার প্রতি ভালবাসার শেষে হয় না । তাঁর ভালোবাসার আবেগে জরিনার পরান যায় যায় অবস্থা । এক সময় ঘর থেকে চলে যেতে চাইলে বলে " তুমি যাইবা ক্যান ? গান শুরু করে চান মিয়া --

কইলজার ভিতর গাঁথি রাইক্কুম তোঁয়ারে
সিনার লগে বাঁধি রাইক্কুম তোঁয়ারে, ও ন'নাইরে
কইলজার ভিতর গাঁথি রাইক্কুম তোঁয়ারে
।। -----"

শতই হোক নিজের সংসার । শত অত্যাচার মুখ বন্ধ করে দিন কাটায় জরিনা। এক সময় রাস্তায় এক চুন্দরি মহিলাকে দেখে কাইত হয়ে যায় চান মিয়া । বুড়ো শরীরে যৌবন মাখানো সতেজ মন আবার কুতকুতি দিয়ে উঠে । সিনেমার ভিলেনের মতন বিয়ে করে ঘরে তুলে নিয়ে আসে জামায়বাবু । এক প্লেট ভাত বেশী দেয়া লাগবো দেখে ভালবাসামাখা লাথি মেরে বের করে দেয় তাঁর প্রথম বউকে । বউ কেঁদে কিছু বলতে যাচ্ছিলো , তৎক্ষণাৎ চেঁচিয়ে উঠে চান মিয়া , " আমি এইখানে একমাত্র কর্তা , এইটা আমার ঘর ।। তুই কে বলার ? আমার যা খুশি আমি তা করুম । আমি একটা না আরও একশো টা ইয়ে করুম , তাতে তোর কি ? " যাক্‌ , বউ চলে গেছে । অপারেশন সাকসেসপুল । এখন বন্ধুদের ম্যানেজ করতে হবে । এবার প্রথম বউ অনুপস্থিত । বন্ধুদের দেখেই সাকিব খানের মতন হাউমাউ করে কেঁদে উঠে চান মিয়া - "তোরা তো দেখছছ , অ্যাঁই বউরে কত ভালবাইসতাম । বউ অ্যাঁর লগে কি বেইমানিটা না করলো । অ্যাঁরে ধুই চলি গেছে গই । প্রতিমাশে বিশ হাজার টাকার আটা ময়দা সুজি শুধু মুখে মাইখবার লায় কিনি দিতাম । কতো খারাপ , নষ্ট মনের মহিলা ছিলো হিতি । অ্যাঁই একা এখন ক্যানতে থাককুম । অ্যাঁর ডর করে । কস, না তোরা , কি করমু ? " -

চান মিয়াঁর দুঃখ থেকে বন্ধুমহলরা আবেগে কাঁদতে থাকে । তাদের মধ্যে একজন তাঁকে সান্ত্বনা দেবার জন্য চেষ্টা শুরু করে - " বন্ধু বউ চলে গেছে কষ্ট পাইছো। বুচ্ছি তো আমরা । সব মেয়েরাই এইরাম হয় । এবার , দুই ট্যাঁকার একখান বিড়ি ধরাও তো দেখি । বিড়িতে একটা টান দিলেই দেখবা মন ফুরফুরা কইরা উঠতাছে । তারপর ঘরে যাইয়া গ্যাংনাম ড্যান্স দিবা । সকাল হইলে দেখবা , মন থেইকা "উলালা উলালা" গান বাইর হইতাছে । "