মানিকগঞ্জের তাতের শাড়ি নিয়ে আলোচনা

মানিকগঞ্জের তাতের শাড়ি 

মানিকগঞ্জের তাঁতের শাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে ধুপিয়ান সিল্ক, হাফসিল্ক, কটন,কোটা শাড়ি,জুম শাড়ি সহ এমন অনেক ধরনের শাড়ি।

সাটুরিয়ার দুই পাড়া মল্লিক পাড়া এবং আগ সাভার পারার প্রায় ২৫০ টি পরিবার তৈরি হত জামদানি, গামছা, হাফ সিল্ক, বেনারসি এবং সুতি শাড়ি । আর তাই এই দুই পাড়া জামদানি পল্লি হিসেবে পরিচিতি পায়।

মানিকগঞ্জের শাড়ির গুনগত মানের দিক দিয়ে অনেক ভালো।এর সাথে কোন কালার শাড়ির সাথে কোন কালার রঙ ভালো মানাবে তার দিক দিয়েও খুব সচেতন।

টাঙ্গাইল এ যে সব শাড়ি আছে তেমন শাড়ি মানিকগঞ্জেও তৈরি হয়।সাটুরিয়ায় ২৫০ টি পরিবার তাঁতের সাথে সম্পৃক্ত। দুটো জেলাই ধলেশ্বরীর ছোঁয়া পেয়েছে তাই হয়তো শাড়ির ডিজাইনে , বুননে এত মিল ।

মানিকগঞ্জের শাড়িগুলো বেশিরভাগ টাংগাইলের পাথরাইল ও করোটিয়ার হাটে বিক্রি হয়। সেজন্য অনেকেই একে টাঙ্গাইলের শাড়ি ভাবেন। টাঙ্গাইলেও হাফসিল্ক হয় তবে ধরনে পার্থক্য আছে।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে তাঁতশিল্প রয়েছে। নরসিংদী, সিরাজগঞ্জ যেমন হস্তচালিত তাঁতের পণ্যের জন্য অধ্যুষিত এলাকা তেমনি মানিকগঞ্জও তাঁত শিল্পের ঐতিহ্য বহন করে।

মানিকগঞ্জের তাঁতের শাড়িতে ব্লক,বাটিক,টাই-ডাই, সূচি নকশা ইত্যাদি ধরণের সৃজনশীল কাজ করার দারুণ সুযোগ রয়েছে আমাদের উদ্যোক্তাদের। তাই মানিকগঞ্জের তাঁতের শাড়িই এদিকে আলাদা একটি জায়গা দখল করে নিতে পারে আমাদের ফ্যাশনের জগতে।

মানিকগঞ্জের তাঁতের শাড়িগুলো তাঁতিরা তৈরি করার পর প্রতি সপ্তাহে টাঙ্গাইলের করোটিয়া হাটে নিয়ে যেতেন বিক্রি করার জন্য।

কারন মানিকগঞ্জের তাঁতের শাড়ি বিক্রি করার জন্য তেমন প্রচার বা বাজার তৈরি হয়নি আগে। কিন্তু গত দুই বছরের মহামারির সময় তা স্থবির হয়ে গিয়েছিলো।

মানিকগঞ্জের তাঁতের শাড়ির ভ্যারাইটিগুলো একেবারেই বেসিক বুননের হয়ে থাকে। আর এটিই মানিকগঞ্জের তাঁতের শাড়ির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শাড়িগুলোর বেশিরভাগই পাড়ের দিকে নকশা করা হয়। পুরো জমিনে কমই থাকে নকশাগুলো। আর তাইতো শাড়িগুলো ফিউশনধর্মী কাজের জন্য খুব উপযোগী।

মানিকগঞ্জ সম্ভাবনাময় একটি জেলা যেইখানের তাঁতশিল্প অনেক বেশি সমৃদ্ধ। এই সম্ভাবনাময় শিল্পকে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করা সম্ভব শুধুমাত্র সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এর পণ্য গুলো তুলে আনার মাধ্যমে। দেশীয় এই তাঁতের শাড়ি যখন সবাই কিনবে এবং সেটা পরে ছবি তুলে পোস্ট করবে, নিয়মিত লেখালেখি করবে তখন সবাই জানতে পারবে যে মানিকগঞ্জেও এত এত সুন্দর তাঁতের শাড়ি রয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিজনেস প্রোমোশন কাউন্সিল ও ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ই-ক্যাব এর যৌথ প্রচেষ্টায় মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নকে প্রথম ডিজিটাল পল্লী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে যেই প্রজেক্টে ইডিসি তথা ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ও যৌথভাবে কাজ করছে। এই প্রথম প্রান্তিক পর্যায়ে এমন একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যেইখানে একটি গ্রাম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে তাকে একটি মডেল গ্রাম হিসেবে এর সম্ভাবনা উন্মোচন করা হবে।

মানিকগঞ্জের তাঁতের শাড়ী জোয়ার চলছে গত ৭/৮ বছর ধরে অনলাইন পেইজগুলোতে। কিন্তু এখানে তাঁতের প্রসার লাভ করতে থাকে ৭০ দশক থেকে। প্রচারের অভাবে সেটা অনেকেরই অজানা। ২০১৫/১৬ সাল থেকে বেশ কিছু অনলাইন পেইজ এই শাড়ি দিয়ে তাদের বিজনেসের শুরু করে। বর্ত্মানে তাদের মধ্যে অনেক পেইজই ব্র‍্যান্ড হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।