অভাব মোচনে মুশকিল আসান ক্রাউড ফান্ডিং

অভাব মোচনে মুশকিল আসান ক্রাউড ফান্ডিং

যে কোনও কাজের জন্যে টাকার দরকার৷ কিন্তু বললেই তো আর গৌরি সেনের দেখা মেলে না৷ অনেকেরই অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে একেবারে রাতের ঘুম ছুটে যায়৷ কিন্তু ইন্ডারনেটের যুগে এই ব্যাপারে মুশিকল আসান হয়ে উঠছে ক্রাউড ফান্ডিং ৷ এই তহবিল শুধু ব্যবসার মূলধন যোগায় না যে কোনও সৃষ্টিশীল কাজেও এর সহায়তা পাওয়া যায়৷ নাটক পাগল দুই প্রবাসী বাঙালী বিজ্ঞানী অনিন্দিতা ভদ্র ও অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের নাটক নামাতে উইসবেরি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন৷ তাঁরা তাদের ‘বৃষ্টি’ নাটকের প্রমোশানাল ভিডিও ছেড়ে টাকা তুলেছিলেন আর সেই টাকা থেকেই ২০১৪ সালে কলকাতায় মঞ্চস্থ হয়ছিল নাটক ৷ ধীরে হলেও ইতিমধ্যেই এদেশে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্রাউড ফান্ডিং-এর মাধ্যমে প্রকল্প চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে হয়তো আগামী দিনে তেমন জনপ্রিয়তা পেলে এটিই হয়ে উঠতে পারে একটি আস্থার কারণ৷ তবে তার আগে বুঝে নেওয়া দরকার এই ক্রাউড ফান্ডিং ব্যাপারটি ৷

ক্রাউড ফান্ডিং মানে কি ?
ক্রাউড ফান্ডিং হল কোনও একটি উদ্দেশ্য অল্প অল্প করে অনেকের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের একটি প্রক্রিয়া। ইন্টারনেটকে ভিত্তি করে বেশ কিছু মানুষের কাছ থেকে অল্প পরিমানে এই অর্থ সংগ্রহ করা হয় ।
যাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হল তাদের অবশ্যই জানানো হবে সেই অর্থ কেন ও কী ভাবে খরচ করা হবে৷ এখন যারা অর্থ ঢাললেন তারা মূলত ৪ প্রকার সুবিধা পেতে পারেন ৷ প্রথমত তিনি এটা অনুদান হিসেবে দিতে পারেন এবং সেই সংগৃহীত অর্থ কোনও একটি উদ্যোগ বাস্তবায়িত করতে কাজে লাগানো হবে ৷ ফলে সেই উদ্যোগকে সহযোগীতা করার মাধ্যমে একটা মানসিক তৃপ্তি লাভ । দ্বিতীয়ত এই অর্থ প্রদানের ফলে ভবিষতে কোনও পণ্য বা পরিষেবা গ্রহনের সুযোগ থাকবে। তৃতীয়ত প্রস্তাবিত ব্যবসায় অংশীদার হতে পারেন সেক্ষেত্রে লভ্যাংশ পেতে পারেন৷ চতুর্থত প্রদেয় অর্থের ওপরে সুদ পেতে পারেন৷

ক্রাউডফান্ডিং- এর উৎপত্তি
কয়েক বছর আগে ২০০৮ সাল নাগাদ আগে গোটা দুনিয়া জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছিল। সে সময় মন্দার প্রভাবে অ্যামেরিকাসহ ইউরোপীয় দেশগুলোতে ব্যাংকগুলি প্রায় ধুকতে থাকে৷ ব্যাংক এবং আর্থিক সংস্থাগুলি ভীষণ ভাবে রক্ষণশীল হয়ে যায় ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ৷ ফলে নতুন উদ্যোক্তাদের কিছু করার জন্য অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে রীতিমত সমস্যায় পড়তে হয়৷। শুধু নতুন নয় পুরনো উদ্যোক্তাদেরও অর্থ সহায়তা পেতে অনেক কাল ঘাম ছুটেছিল । তখন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মগুলোও তাদের কার্যক্রম সংকুচিত করে ফেলেছিল । সেই সময়টাতে মুশকিল আসান হিসেবে গজিয়ে ওঠে ক্রাউড ফান্ডিং যা এক নতুন আশার আলো দেখাতে শুরু করায় অনেকেই । মূলত ২০০৮সালের মন্দার পরই ক্রাউড ফান্ডিং এলেও তার আগেও এই ধরনের তহবিল সংগ্রহের খোঁজ পাওয়া যায়৷ একেবারে সপ্তদশ শতকেই এই ক্রাউড ফান্ডিং-এর হদিশ মিলেছিল বলে অনেকে মনে করেন৷ আবার উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে পশ্চিম ইউরোপ ও উত্তর অ্যামেরিকায় স্বার্থেরভিত্তিতে গোষ্ঠী গঠন ও সমবায় আন্দোলেনের ভিতরেও এই ক্রাউড ফান্ডিং-য়ের মানসিকতা নিহিত ছিল৷ তাছাড়া ২০০৩ সালে আর্টিস্ট শেয়ার, ২০০৫ সালে ইক্যুইনেট, ২০০৬ সালে সেলাবান্ডের মতো কিছু উদাহরণ রয়েছে ৷ এরপর মন্দার সময় গিফটফরওয়ার্ড , কিকস্টার্টার, ইন্ডিগোগো ফান্ডি নামে আরও বেশ কিছু প্লাটফর্ম এসে যায় যার থেকে উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করতে থাকে । তাছাড়া এই ক্ষেত্রে সাফল্য দেখে অনেকেরই উৎসাহ বাড়ে ক্রাউডফান্ডিং সম্পর্কে। ক্রাউডফান্ডিং পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে একজন উদ্যোক্তা বা কোন একটি সংগঠন তাদের প্রকল্পের জন্যে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। সেটা যে কোনও প্রকল্পেই যেমন- সিনেমা প্রযোজনা, নাটক মঞ্চস্থ করা, লাইব্রেরী বানানো, যে কোনও বিষয়ে গবেষণা, অসুস্থের চিকিৎসা খরচ, মেধাবী ছাত্রের পড়ার ব্যবস্থা, বন্যা বা ভূমিকম্পের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্তদের সাহায্যার্থেও এই ব্যক্তিগত অনুদানের থেকে গঠিত তহবিল বা ক্রাউড ফান্ডিং-কে কাজে লাগানো হয়। এরজন্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে শুধু বুঝে নিতে হবে তাঁর প্রদেয় অর্থ দিয়ে এই তহবিল গড়ার উদ্দেশ্য কি?
এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিশেষ কোনও প্রকল্পের জন্যে ফান্ড সংগ্রহের সুযোগ পাওয়া যায় ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্মে । সে জন্যে একজন উদ্যোক্তাকে তার প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত লিখে এবং এই প্রকল্পের জন্যে কত পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন তা উল্লেখ করেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট করতে পারেন । পোষ্ট করা শেষে উদ্যোক্তা ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্মের কমিউনিটি সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মাধ্যমে ফান্ড সংগ্রহের লক্ষমাত্রা পূরণ করতে পারেন । আবার লক্ষমাত্রা পূরণ নাও হতে পারে । যেমন ইন্ডিগোগো ২০১৪ সালে তাদের পরিচালিত ক্যাম্পেইনগুলোর মধ্যে মাত্র ৯% সফলভাবে ফান্ডিং করতে পেরেছিল । এখন অর্থ সংগ্রহের লক্ষমাত্রা পূরণ না হলে যা সংগ্রহ করা গিয়েছে তা রেখে দেওয়া যেতে পারে। তখন তাকে বলা হয় কিপ ইট অল। আবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে তখন সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দিয়ে দিতে পারেন যাকে বলা হয় কিপ অল অর নাথিং । এই ব্যবস্তায় তহবিল বৃদ্ধি করার মৌলিক বিষয়টি হচ্ছে অনেক মানুষের কাছ থেকে অল্প পরিমানে অর্থ সংগ্রহ করা ।

ক্রাউড ফান্ডিং-য়ের জনপ্রিয়তা
ইউনাইটেড কিংডম থেকে ২০১৪ সালের মে মাসে এই বিষয়ে একটি রিপোর্ট বের হয় যা বলছিল ২০১৪ সালের মার্চেই শুধুমাত্র এক ঘন্টায় ক্রাউড ফান্ডিং-এর মাধ্যমে ৬০হাজার ডলার তোলা হয়েছে৷ সেই সময় লক্ষ্য করা গিয়েছিল ৪৪২টি ক্রাউড ফান্ডিং -এর প্রচার চলছিল৷ ঠিকভাবে ক্রাউড ফান্ডিং শুরু হলে অনেক মেধাবীর স্বপ্ন পূরণ হবে। অনেককেই নতুনভাবে ভাবে ভাবতে পারবে, নতুন প্রজন্ম উৎসাহিত হবে উদ্ভাবনী কিছু করতে৷ প্রাথমিক অবস্থা হলেও এদেশের মানুষও ক্রাউড ফান্ডিং-য়ের সম্পর্কে সচেতন হচ্ছে ৷ তা হলে অবশ্যই দিন বদলের ঘটনা ঘটে যাবে৷

No comments:

Post a Comment