পার্সোনাল ব্র‍্যান্ডিং এর প্রয়োজনীয়তা এবং তা অর্জনের উপায়সমূহ


বিষয়ঃ পার্সোনাল ব্র‍্যান্ডিং ও এর প্রয়োজনীয়তা, গুরুত্ব ও তা অর্জনের বিভিন্ন উপায়সমূহ নিয়ে আলোচনা করেন। 

পার্সোনাল ব্রান্ডিং আমরা সবাই চাই কিন্তু এজন্য কষ্ট করতে চাই না। বিজনেসে এর দরকার খুব বেশি। ধরেন আপনি জামদানি শাড়ি কিনতে চান। আপনি কেন কাকলি আপুকে নক দেন? 
পার্সোনাল মানে নিজের ,বা আপনি। ব্র্যান্ডিং মানে চিহ্ন,বা এক নাম।পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং মানে আপনার নিজের একটি চিহ্ন,তা দিয়ে সবাই আপনাকে চিনবে।
পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং শব্দটা একজন আদর্শ উদ্যোক্তার সাথে যায়।
খাঁটি বাংলায় বলতে গেলে যদি কোনো উদ্যোক্তা নিজের পণ্য এবং স্মার্টলি আধুনিকভাবে উপস্থাপন করে তাকে পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং বলে।
ধরুন আপনি শাড়ি বিক্রি করেন সেক্ষেত্রে আপনার পণ্য এর গুণগত মান শৈলীভাবে উপস্থাপন করে নিজের মেধা পরিশ্রম উদ্যম একাগ্রতা দিয়ে নিজেকের পণ্যকে জনপ্রিয় করে তুলেন নিজের পণ্যের মার্কেট তৈরি করেন তখন তাকে পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং বলে।
ধরুন আপনি খুব জনপ্রিয় বাট আমি না
কিন্ত কেন?
হ্যা আপনার পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং মজবুত এবং আকর্ষণীয়।
ই-কমার্সের যুগে এখন অনলাইনে ব্যবসা করছে লাখো লাখো উদ্যোক্তা, এবং এখন প্রতিষ্ঠানগুলো বা বিভিন্ন কোম্পানিগুলো তাদের ব্র্যান্ড বা কোম্পানির বিজ্ঞাপন করছে অনলাইনের মাধ্যমে, তাই এক্ষেত্রে পার্সোনাল ব্রান্ডিং তো করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
নিজেকে যদি সোশ্যাল মিডিয়াতে শক্তিশালী বা প্রভাবশালী হিসেবে দেখতে চায় যে কেউ তবে তার অবশ্যই পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং করতে হবে
লিংকড–ইন, ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম (সোশ্যাল মিডিয়া) পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের অনন্য মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
আমরা বিভিন্ন পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিংয়ের কথা প্রায়ই শুনে থাকি। কিন্তু পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং বা নিজের ব্র্যান্ডিংয়ের কথা আমরা অনেকেই ভাবি না। একবারও ভেবে দেখেছেন কি, বিভিন্ন পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের ভালো দিকগুলোর কথা যখন আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনি, তখনই কিন্তু আমরা পণ্যটি কিনি বা ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো সেবা গ্রহণ করে থাকি। সর্বোপরি ওই পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড ভ্যালু আমাদের কাছে বাড়ে।
নিজেকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইলে অ্যাকাউন্টে নিজের সম্পর্কের পর্যাপ্ত নির্ভুল তথ্য থাকতে হবে। যেন আপনার প্রোফাইলে কেউ প্রবেশ করলে আপনার সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারেন। আর একাধিক প্ল্যাটফর্মে তৈরি করা প্রোফাইলগুলোতেও যেন সামঞ্জস্য থাকে। যেমন ফেসবুক, টুইটার, লিংকড–ইনসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সার্টিফিকেটের নামে ও একই নামে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা, প্রোফাইল ছবিটি একই রাখা, যেন সবাই সহজে চিনতে পারে, নিজের সম্পর্কে একই রকম তথ্য দেওয়া ইত্যাদি।
বর্তমানে ব্যাঙের ছাতার মত উদ্যাক্তা হচ্ছে এবং হারিয়ে যাচ্ছে
কিন্ত কেন জানেন?
হ্যা পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং এর অভাব।
জ্ঞানের অভাব পড়াশোনার অভাব
অনেকে পারসোনাল অবকাঠামো উন্নতি না করেই চাই ফেমাস হতে রাতারাতি
কিন্ত দিন শেষে যে লাউ সে কদু
অল্পতেই হাল ছেড়ে দেওয়া।
পারসোনাল ব্র‍্যান্ডিং আপনাকে শিখাবে কিভাবে লেগে থাকতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে
কিভাবে নিজের পণ্যের প্রচার ও আকর্ষণীয় করতে হবে
কিভাবে নিজেকে ধৈর্যশীল হয়ে বিভিন্ন রকম কাস্টমার হ্যান্ডেল করতে হয়।
একাগ্রতা নিয়ে কিভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়।
পার্সোনাল ব্রান্ডিং এর মাধ্যমেই মানুষ অাপনার পন্য সম্পর্কে জানবে,বুঝবে,চিনবে। রাজিব স্যার সব সময় বলেছেন__ "পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং হয়ে গেলে আপনার ছাইও বিক্রি হবে।"
পার্সোনাল ব্রান্ডিং ভালো না হলে বিজনেস নিয়ে বেশিদূর এগিয়ে যাওয়া যায়না। উদাহরন স্বরূপ বলা যায় আমাদের কাকলি আপুর পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং কিন্তু দারুণ স্ট্রং।
যেমন ধরুন লিংকড–ইন পেশাজীবীদের জন্য একটি চমৎকার জায়গা। এখানে একজন ব্যক্তির শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মপ্রতিষ্ঠানের নাম, কাজের বিবরণ, বিশেষ স্বীকৃতিসহ বিভিন্ন তথ্য দেওয়া থাকে। লিংকড–ইন থেকেই অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের যোগ্য কর্মী খুঁজে নেয়। তাই ভালোভাবে একটি লিংকড–ইন প্রোফাইল তৈরি করে অন্যদের সঙ্গে যুক্ত হলে ক্যারিয়ারে নতুন সুযোগ তৈরির সম্ভাবনা থাকে। তা ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মী নিয়োগের আগে কর্মীর ফেসবুকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল ঘেঁটে তাঁর কার্যকলাপ, আচরণ ও চালচলন সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করে। আর এখন তো যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য আবেদন করলেও আবেদনকারীর সোশ্যাল মিডিয়া দেখা হয়।
পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে একজন ব্যাক্তির যদি নাম সার্চ করার মাধ্যমে তার সোশ্যাল মিডিয়াতে ও তার বিভিন্ন ওয়েবসাইট গুলো ও তার বিভিন্ন ম্যাগাজিন বা কোন নিউজ তথ্য তার সম্পর্কে আর্টিকেল গুলো পাওয়া যায় তবে সেটাই তার একটি শক্তিশালী পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং ‌ এর পরিচয় বহন করে
ফেসবুক বুস্ট করার মাধ্যমে পণ্য সেল করা যায় এমন একটি ভ্রান্ত ধারণা একটা সময় মানুষের ছিল। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ততই এই ধারণার পরিবর্তন হচ্ছে।হয়তোবা ফেসবুক বুস্ট এর মাধ্যমে অর্গানিক কিছু লাইক বাড়ে কিন্তু সেল বাড়ানোর জন্য অবশ্যই পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এর দরকার হয়।
পার্সোনাল ব্যান্ডিং করতে যেয়ে আপনাকে খেয়াল করতে হবে আপনার অডিয়েন্স করা, কারা আপনার লিখা পড়ে, তাদের রুচি অনুযায়ী আপনি লিখলে আপ্নার গ্রহন যোগ্যতা বেশী পাবে ফলে খুব জলদি পার্সোনাল ব্রান্ডিং টা মজবুত হবে
শুরুতেই পারফেকশনিস্ট হবার দিকে মনোযোগ না দিয়ে মূল লক্ষ্য থাকতে হবে আপনার ফলোয়ার বা অডিয়েন্সের কাছে ভ্যালু এড করার দিকে। অর্থাৎ আপনার কাজ, লেখা বা সার্ভিস মানুষের কাজে আসে, তাদের প্রবলেম সলভ হয়।

খেশ শাড়ির পরিচিতির ক্ষেত্রে সবার আগে আমার মাথায় চলে আসে নিগার আপুর কথা। কারণ নিগার আপু তার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে খেশ শাড়ি কে একটা ব্যান্ড এ গিয়ে দাঁড় করিয়েছেন।
আমরা যখন কোন চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে যাই তখন প্রথম কোশ্চেনটা কি করে ? প্রথম কিন্তু জানতে চায় নিজের সম্পর্কে ।আমি যদি আমার নিজের সম্পর্কে খুব ভালো বর্ণনা দিতে পারি এবং নিজের গুরুত্ব তুলে ধরতে পারি। তাহলে কিন্তু আমার সামনের দিকটা খুব সহজ হয়ে যায়।
চাকরিদাতা সেই পাঁচ মিনিট কথা বলেই বুঝতে পারে যে আমি তার প্রতিষ্ঠানের জন্য যোগ্য কিনা।সুতরাং প্রথমে নিজেকে ব্র্যান্ডিং করতে হবে এবং পার্সোনাল ব্লেন্ডিং করার জন্য জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
আমার কাছে পার্সোনাল ব্রান্ডিং বলতে বুঝায় খাস বাংলায় নিজের ঢোল নিজে পিটানো। এই কথাটা আমরা একটু আর চোখেই বলে থাকি। কিন্তু আসলে কিন্তু তা না। যেমন ধরুন আমরা লাক্স সাবান প্রায় বেশির ভাগ মানুষ ব্যবহার করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি কারন লাক্স এই ব্র্যান্ডটি আমাদের মধ্যে বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পেরেছে। আর তা নিশ্চয়ই এক দিনে হয় নি। নিজেদের পন্য নিয়ে অনেক বিজ্ঞাপন করেছে। এমনকি অভিনয় জগতের শিল্পীদের নিজেদের ব্র্যান্ড এ্যমব্যেসেডর করেছে কারণ সেই সব শিল্পীদের আমরা খুব পচ্ছন্দ করি এবং তাদের কথা খুব সহজে বিশ্বাস করি। তাই নিজের পরিচিতি বাড়াতে,  নিজেকে বিশ্বস্ত হিসেবে অন্যের কাছে তুলে ধরতে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এর কোন বিকল্প নেই।
পার্সোনাল ব্যান্ডিং তৈরির আরেক টা উপায় হলো আপনি যে পন্য নিয়ে কাজ করছেন সেটা সম্পুর্ন বিশ্লেষণ করা, যেন আপনার অডিয়েন্স আপ্নার লেখার অপেক্ষায় থাকে নতুন তথ্য জানার জন্য।
পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এর জন্য যে সব থেকে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে
👉 নিজের আসল নাম ব্যবহার করতে হবে
👉 নিজের সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয়া যাবে না
👉 বিভ্রান্তিকর উস্কানিমূলক মিথ্যা ও অশ্লীল পোস্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে
👉 সারাদিন অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অাজেবাজে পোস্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে
👉 ব্যক্তিগত কথোপকথনের স্ক্রিনশট পোস্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে
নেটওয়ার্ক তৈরি মাধ্যমে  পার্সোনাল বান্ডিং :
পারস্পারিক যোগাযোগ ব্র্যান্ডিংয়ে খুব দরকার। ক্রেতা বিক্রেতা, শুভাকাঙ্ক্ষী, প্রতিবেশী, বন্ধু, আত্মীয় সবার সাথে পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করা। অনেকে আছেন যারা ব্যবসা শুরু করার পর বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন ওপ্রতিবেশীদের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেন। এটা এক ধরণের বোকামি। এই পারস্পরিক সম্পর্কগুলো খুব সহজেই আপনার প্রতিষ্ঠান বা পণ্যের ব্রান্ডিংয়ে কাজে লাগতে পারে।

No comments:

Post a Comment